হরিপদ কাপালিঃ সনদ বিহীন এক নিরক্ষর উদ্ভাবক।

হরিধান

 "হরিপদ কাপালি:
  সনদ বিহীন এক নিরক্ষর উদ্ভাবক"
___________________________________________
হরিপদ কাপালি (জন্ম:১৭ সেপ্টেম্বর ১৯২২-মৃত্যু: ৬ জুলাই ২০১৭) বাংলাদেশের একজন প্রান্তিক কৃষক যিনি হরি ধানের উদ্ভাবক।

১৯৯৬ সালে ধানের নতুন যে জাত তিনি উদ্ভাবন করেন, সেটিই পরে তার নামে 'হরি ধান' হিসেবে পরিচিতি পায়।

হরিপদ কাপালির জন্ম ১৯২২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহের সদর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামে।
তার বাবার নাম কুঞ্জু লাল কাপালী এবং মায়ের নাম সরোধনী। জন্মের পরেই তার বাবা-মা মারা যান। পরে তিনি বিভিন্ন লোকের বাড়িতে দৈনিক দিন মজুরীর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন এবং আসাননগর গ্রামে সুনিতী বিশ্বাসকে বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতেই থেকে যান।

★ হরি ধানের আবিস্কার:

একদিন নিজের ইরি ধান ক্ষেতে একটি ব্যতিক্রমধর্মী ধান গাছ দেখে হরিপদ কাপালি সে ধানটিকে আলাদা করে রাখেন। এরপর বীজ সংগ্রহ করে ১৯৯২ সালে নিজের ক্ষেতে এ ধান আবাদ করেন তিনি। পরে এই ধানের আবাদ সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়ে।

নিজের এলাকার কৃষকরা হরিপদ কাপালির কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে ইরি ও বোরো মৌসুমে এ ধান আবাদ শুরু করে।

১৯৯৪ সালের দিকে ঝিনাইদহসহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে নাম পরিচয় বিহীন এক জাতের ধানের আবাদ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

পরবর্তীতে ১৯৯৫ সালে ধানটি নিয়ে বিভিন্ন দৈনিকে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

১৯৯৬ সালে টেলিভিশনের সচিত্র প্রতিবেদন প্রচার হলে বিষয়টি সারা দেশে আলোচিত হয়।

পোকামাকড়, খরা ও অতিবৃষ্টি সহিষ্ণু এই জাতের ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ দেখে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট পরীক্ষা নিরিক্ষা করে বিশেষ ধরনের এই জাতের ধান চাষের ওপর ছাড়পত্র দেয়।

এই ধান উদ্ভাবনের জন্য হরিপদকে বাংলাদেশের বিভিন্ন কৃষি সংগঠন সম্মাননা ও পুরস্কার দেয়।

নবম ও দশম শ্রেণির কৃষি শিক্ষা বইতে হরিপদ কাপালির কথা অর্ন্তভুক্ত করা হয়। নিজের উদ্ভাবিত এই ধানের নামকরণও হরিপদ কাপালির নামে 'হরি ধান' করা হয়।

হরিপদ কাপালি তার ধানক্ষেতে ধানের একটি গোছাকে আলাদা করে রাখেন যার ছড়াতে ধানের সংখ্যা বেশি বেশি ছিল এবং ধান গাছটিও পুষ্ট ছিল। পরবর্তীতে তিনি ওই গোছাকে তিনি আলাদা করে লালন-পালন করলেন।

পরের বছর সেই গোছার ধান দিয়ে একটুখানি জায়গায় বীজতলা আর সেই চারা লাগালেন খানিক জায়গায়। ফলনের পর দেখা গেল মোট জমির বিআর-১১ ধানের চেয়ে এ ধানের ফলন বেশি।

পরেরবারও নিজের জমিতে কেবল নতুন ওই ধানের চাষই করেন তিনি। আর পেয়ে যান বিআর-১১ কিংবা স্বর্ণার চেয়ে উচ্চফলনশীল ধান।

তখন বিঘাপ্রতি বিআর-১১-এর ফলন ছিল ১৮ থেকে সর্বোচ্চ ২০ মণ। কিন্তু হরিপদ কাপালির নতুন ধানের ফলন ছাড়িয়ে গেল ২২ মণ এবং তুলনায় সারও কম লাগে।

★ পুরস্কার ও সম্মাননা:

হরিপদ স্থানীয় জেলা প্রশাসন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র, ঢাকা রোটারি ক্লাবসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রায় ১৬টি পদক পেয়েছেন।

মৃত্যু:

হরিপদ কাপালি ২০১৭ সালের ৬ জুলাই ঝিনাইদহের  আসাননগর গ্রামে বার্ধক্যজনিত কারণে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৯৫ বছর।

No comments

Powered by Blogger.

copyright(c)2020Leading24 BD All Rights Reserved